মানুষকে ভক্তে পরিণত করতে গ্রন্থ বিতরণই প্রথম পদক্ষেপ

 গ্রন্থ বিতরণই হচ্ছে আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারের মূল বা প্রাণকেন্দ্র। শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরও গ্রন্থ প্রকাশ ও তা বিতরণের উপর জোর দিতেন। তিনি বলতেন নামহট্টের প্রচার একদিকে যেমন পবিত্র ধামের উন্নয়ন ঘটাতে সাহায্য করবে, তেমনই আরও অধিক সংখ্যক গ্রন্থ বিতরণেও সাহায্য করবে। এই ছিল মূল পরিকল্পনা।



আমেরিকায় হাউস্টোনে আমাদের সাতটি ভক্তিবৃক্ষ দল আছে। সেখান থেকে কিছুদিন আগে আমাকে ফোনে জানানো হলো যে ‘ওয়ালমার্ট’-এর জনৈক ম্যানেজার আমাদের একটি ভক্তিবৃক্ষ দলের সদস্য এবং তিনি ‘ওয়ালমার্ট’ এর বাইরে বইয়ের টেবিল স্থাপন করে ভক্তদের গ্রন্থ বিতরণের জন্য ‘ওয়াল-মার্ট’ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন জোগাড় করেছেন। যারা জানেন যে ‘ওয়ালমার্ট’ কি, তাদের জন্য বলছি–‘ওয়ালমার্ট’ হচ্ছে একটি বৃহৎ বিপনী বা সুপার মার্কেট, যেখানে সবকিছু তারা বিক্রি করে, আপনি যা চান সবকিছুই সেখানে আপনি পাবেন। সপ্তাহের শেষ দিনে হাজার হাজার লোক ‘ওয়াল-মার্টে’ কেনাকাটা করতে যায়। ভক্তরা মাত্র কয়েক সপ্তাহ হলো সেখানে বইয়ের টেবিল সাজিয়ে গ্রন্থ বিতরণ করছে, কিন্তু এরই মধ্যে তারা যথেষ্ঠ সফল। গত কয়েকদিন আগে, আমি যেদিন খবর নিলাম, জানলাম তারা সেদিন সাতশো ডলার মূল্যের গ্রন্থ বিতরণ করেছে। খারাপ নয়।

রাশিয়াতেও আমি সাবওয়ে বা ভূগর্ভ পথগুলির বাইরে বইয়ের টেবিল সাজিয়ে গ্রন্থ বিতরণ করতে দেখেছি। তাই, এখন এইভাবে বিভিন্ন স্থানে বইয়ের টেবিল সাজিয়ে গ্রন্থ বিতরণের পন্থাটি প্রচলিত হচ্ছে। আটলান্টায় অনেক ভারতীয় দোকান রয়েছে। ভবিষ্যতে সপ্তাহান্তে কোন বড় ভারতীয় দোকানের সামনে এইভাবে বইয়ের টেবিল সাজিয়ে আমরা গ্রন্থ বিতরণ করতে পারি। এতে ভারতীয় দোকানদারেরা কিছু মনে করবে না। কেননা সেখানে প্রচুর ভারতীয়রা আসেন। দিল্লীর ভক্তরা এ বৎসর (২০০৬) গ্রন্থ বিতরণের ম্যারাথনে প্রথম হয়েছে। শ্রীমৎ গোপালকৃষ্ণ স্বামী মহারাজ আমাকে বলেছিলেন ৬০ শতাংশ গ্রন্থ বিতরণ করেন গোষ্ঠীবদ্ধ প্রচারকেরা। বৎসরের এক মাস তারা শুধু এই সেবাই করেন। কিছুকাল আগে ব্যাঙ্গালোরে আমাদের বিভিন্ন ভক্তিবৃক্ষ গোষ্ঠীগুলি পরস্পর গ্রন্থ বিতরণের প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। তারা এতটাই প্রতিযোগি মনোভাবাপন্ন ছিল যে ম্যারাথন শেষ হয়ে যাবার পরও তারা চাইছিল, এরকম প্রতিযোগিতা চলুক। এটিও একটি নতুন দিক্।

গ্রন্থ বিতরণের আরেকটি বড় দিক হলো গণ-সখ্য-ভিত্তিক গ্রন্থ বিতরণ। জনসাধারণের সঙ্গে আমাদের প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। গ্রন্থ বিতরণের পরিমানের উপর শুধু নজর দিলেই চলবে না, জনসাধারণর সঙ্গে সখ্যতার সম্পর্ক তৈরির গুণের দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। জনসাধারণের যদি ভক্তদের প্রতি ভালো ধারণা জন্মায়, তারা যদি ভক্তদের পছন্দ করে, যদি ভক্তেরা মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে, তাহলে কাউকে গ্রন্থ বিতরণের জন্য আর আলাদা করে কোন বিশেষ কৌশলের পরিকল্পনার দরকার হয় না। প্রথমবার যদি কেউ গ্রন্থ নাও গ্রহণ করেন, যদি তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার বজায় থাকে, তাহলে পরের বার সে নিশ্চয়ই গ্রন্থ গ্রহণ করবে। কেউ গ্রন্থ না কিনলেও, তার সঙ্গে আমাদের সখ্যতার সম্পর্কটি বজায় রাখা উচিত, যদি ভক্তদের নাম, ঠিকানা, ফোন নং ইত্যাদি যোগাযোগের সূত্র সম্বলিত কার্ড থাকে, তবে সেটি সেই মানুষটিকে দিতে হবে। যারা গ্রন্থ কিনছে, তাদের সঙ্গেও একটি প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত তাকে অনুরোধ করতে হবে, ‘গ্রন্থটি পাঠ করে আপনার কেমন লাগলো, আপনার মতামত আমাদের চিঠি লিখে জানাবেন।’ গ্রন্থের ক্রেতা, গ্রন্থ বিতরণকারী ভক্তকেও তাঁর মতামত জানাতে পারেন, অথবা গ্রন্থ-বিতরণকারী ভক্তের কাছে এটি অতিরিক্ত চাপ মনে হলে, গ্রন্থের ক্রেতাকে নিকটবর্তী ইসকন কেন্দ্রে তার মতামত জানাতে বলতে হবে। আর নিকটবর্তী ইসকন কেন্দ্রকে সেইসব মতামত প্রেরণকারীদের সঙ্গে চিঠির উত্তর দিয়ে অথবা যেকোনভাবে যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। তবে সাধারণতঃ গ্রন্থ-ক্রেতাগণ বা সাধারণ মানুষেরা প্রথম যে ভক্তের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল সেই ভক্তের কাছ থেকেই আবার শুনতে চায়–‘ও, আমি ঐ ব্যক্তির সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয়েছিলাম, উনি খুব সুন্দর ব্যক্তি।’ ঠিক যেমন, আমি যখন কোন গোষ্ঠীগত প্রচার দলের  (congregational) সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হই, তখন অনেকেই তারা আমাকে বলেন, প্রথম কে তাদের গ্রন্থ বিতরণ করেছিলেন সেটা তাদের মনে আছে।

ভক্তেরা গ্রন্থ বিতরণ করার মাধ্যমে কৃষ্ণের সঙ্গে সাধারণ মানুষের পরিচয় ঘটাচ্ছে, তারা কৃষ্ণকে প্রদান করছে। মানুষ সেই পাঠ করছে, আর সঙ্গে সঙ্গে তাদের পারমার্থিক জীবনের শুরু হচ্ছে। তাই কখনও কখনও গ্রন্থ বিতরণকারী ভক্তদের বর্ত্ম-প্রদর্শণ-গুরু বলা হয়, অর্থাৎ যে, মানুষকে শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ বিতরণের মাধ্যমে পথ প্রদর্শন করছে। তাই এটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। মানুষের সঙ্গে আমরা কিভাবে, কতখানি প্রীতির সম্পর্কে সম্পর্কিত হতে পরি, সেই গুণমানের উপর আমাদের তাই জোর দেওয়া উচিত। যে সকল মানুষের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠবে, যারা আগ্রহী, তাদের নাম ঠিকানা আমাদের চিঠি পত্র পাঠাবার ঠিকানার তালিকায় রাখা উচিত এবং তদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রাখা উচিত। তারা হয়তো আরও গ্রন্থ পেতে চায়–‘ও, আমি এই বইটি পড়েছি, এখন আমি আরেকটি বই পড়তে চাই।’ আমাদের তাদের সঙ্গে সর্বদা যোগাযোগ রেখে চলতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যতে ভক্ত হতে পারেন এবং একইভাবে তারাও যাতে গ্রন্থ বিতরণ করে এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে আমাদের সাহায্য করতে পারেন।

সারা পৃথিবী জুড়ে আমাদের ইসকনের গ্রন্থ বিতরণকারীদের সঙ্গে হাজার হাজার মানুষের সংযোগ ঘটছে। প্রতিটি সাত সেকেন্ডে একটি করে গ্রন্থ বিতরিত হচ্ছে অর্থাৎ প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন করে মানুষ কেউ না কেউ পারমার্থিক গ্রন্থ লাভ করছেন। আমি জানি না এক মাসে কতজন মানুষ তার সদ্ব্যবহার করছে। কিন্তু এটা ঠিক ভক্তেরা অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শ লাভ করছে। আমাদের তাই এরকম একটি ব্যবস্থা রাখা উচিত যাতে আমাদের সঙ্গে পরিচতি হওয়া মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে তাদেরকে পারমার্থিক গ্রন্থ পাঠে উৎসহিত ও প্রশিক্ষিত করা যায়।

গ্রন্থ বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অতিথি পরায়ণও হতে হবে। একজন গ্রন্থ-বিতরক হয়তো কাউকে গ্রন্থ প্রদান করে আমাদের মন্দির দর্শন করার জন্য আমন্ত্রন জানালো। এরপর সেই লোকটি একদিন আমাদের কোন একটি মন্দিরে গেল, কিন্তু মন্দিরে কেউই তাকে তেমন পাত্তা দিল না বা তাকে অভ্যর্থনা করার বিষয়টি অনুভব করলো না। এটা ঠিক নয়। কেননা আমাদের উদ্দেশ্যটি হচ্ছে গ্রন্থ বিতরণের মাধ্যমে মানুষকে ভক্তে পরিনত করা। এমন অনেক ভক্ত আছেন, যারা কেবলমাত্র শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ পাঠ করে ভক্ত হয়েছেন। এরকম অনেক কাহিনী রয়েছে। অনেক মানুষই গ্রন্থ বিতরণের মাধ্যমে শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থের সংস্পর্শে আসছেন, কিন্তু তাদের সঙ্গে যদি আমরা ভালো ব্যবহার, সুন্দর ব্যবহার না করি তাহলে তারা কৃষ্ণভাবনামৃতকে গ্রহণ করতে দেরী করবে, হয়তো সেটি নিত্যত নয়, কিন্তু কিছু সময়ের জন্য হলেও দেরী হয়ে যাবে। তাই এখন আমরা মন্দিরের ভক্তদের অতিথিপরায়ণ হবার এবং মানুষের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেবার চেষ্টা করছি।

সম্ভবত ভবিষ্যতে আমরা এ ব্যাপারে একটি নির্দেশিকা গ্রন্থ প্রকাশ করবো, কিভাবে অত্যন্ত সদর্থকভাবে মানুষের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ করতে হবে। কেননা ভক্তগণের গ্রন্থ বিতরণের উদ্দেশ্যই হলো মানুষের সঙ্গে কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের আজীবন সম্পর্ক গড়ে তোলা শুরু করা। ভক্তের গ্রন্থ বিতরণের ফলে একজন সাধারণ মানুষ যখন সেই গ্রন্থটি পাঠ করে, তখন সে মনে মনে এই কথাও ভাবে যে, “আমি সত্যি এক সুন্দর ব্যক্তির সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম।” শ্রীল প্রভুপাদ বলতেন যে তাঁর গ্রন্থ যেহেতু ভক্তগণের দ্বারা বিতরিত হয় তাই জনসাধাণের মধ্যে ভক্তদের এক গভীর প্রভাব বা গুরুত্ব রয়েছে আর সেইজন্যই ভক্তগণ হচ্ছেন বিশেষ ব্যক্তি। শ্রীল প্রভুপাদ বিশেষ করে আমাদের মন্দিরগুলির কাছাকাছি বাস করা অধিবাসীদের ভক্তে পরিণত করার কথা বলতেন এবং শ্রীল প্রভুপাদ গৃহে কৃষ্ণভাবনামৃত অনুষ্ঠানও করতেন। ১লা জুন ১৯৬৯ তারিখে লেখা তাঁর একটি চিঠিতে শ্রীল প্রভুপাদ লিখেছেন “আমাদের আশেপাশের অঞ্চল থেকে যে যুবক যুবতী আমাদের মন্দিরের কার্যাবলীতে সাহায্য করতে আসছে, এটি আমাদের বিভিন্ন প্রচেষ্টাসমূহের শুভ ফল। আমাদের মন্দির কেন্দ্রগুলি শুরুই হয়েছে কিভাবে প্রতিটি ঘরে ঘরে তারা ছোট মন্দির গড়ে তুলতে পারে আমাদের মন্দিরের আশেপাশের অধিবাসীদের সে বিষয়ে উপস্থাপনা করার জন্য।”

আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের প্রথম কাজটিই হলো মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা, সংস্পর্শ স্থাপন করা। অসংখ্য নতুন মানুষদের সঙ্গে কারা যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম? ভক্তদের মধ্যে গ্রন্থ বিতরকদের সঙ্গে নতুন নতুন মানুষদের যোগাযোগ হয়। তারা অর্থাৎ সেইসব নতুন মানুষেরা যদি আগ্রহী হয়, তাহলে আমরা তাদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেল ইত্যাদি নিয়ে রাখব, যাতে পরেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। অনেকের কাছে কাজটি ঝামেলার মনে হলেও, সেটি আমাদের করতে হবে, কেননা কে বলতে পারে হয়তো সেই নতুন লোকটিই একদিন এই হরেকৃষ্ণ আন্দোলনের  এক ভক্ত হয়ে উঠবে না? একবার যদি কোন আগ্রহী বা প্রীতিভাবাপন্ন মানুষের ঠিকানা নিয়ে রাখা যায় তাহলে পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। যদি গ্রন্থ বিতরকের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের সময় না থাকে, তাহলে ‘ভক্তিবৃক্ষ’, ‘নামহট্ট’ ইত্যাদি গোষ্ঠীগত প্রচারক ভক্তরা সেই কাজটি করতে পারে। এইজন্য যে গ্রন্থ-বিতরণকারীর সঙ্গে আগ্রহী লোকটির প্রথম পরিচয় হয়েছিল সেই গ্রন্থ-বিতরণকারী একটি পরিচিত-মূলক পত্র লিখে দেবে যেটি নিয়ে অন্য কোন প্রচারক সেই লোকটির কাছে যাবে। নতুবা একদম নতুন একজন অপরিচিত ভক্ত বা প্রচারক হঠাৎ করে সেই লোকটির কাছে উপস্থিত হলে সে অবাক হতে পারে বা তার অস্বস্তি বোধ হতে পারে। সেই পরিচিতমূলক পত্রটির বয়ানটি হবে এরকম, ‘মহাশয়/মহাশয়া, আপনার সঙ্গে আমার অমুক জায়গায, অমুক রাস্তায় যখন আমরা গ্রন্থ বিতরণ করছিলাম, তখন পরিচয় হয়েছিল। আশা করি আপনি আমাদের কাছ থেকে যে গ্রন্থটি সংগ্রহ করেছেন, সেটি আপনার ভালো লেগেছে এবং এই কৃষ্ণভাবনামৃত দর্শনে আপনি কৌতুহলী। আমি যেহেতু গ্রন্থ-বিতরণ করে নানা স্থানে ভ্রমণ করি, তাই আপনার সঙ্গে দেখা করার সময় পাচ্ছি না। তাই আমার এক সহযোগী অমুক চন্দ্র অমুককে আপনার সঙ্গে পরিচিত হবার জন্য পাঠালাম। আশা করি আমার সহযোগীর সঙ্গে কথা বলে আপনার ভালো লাগবে। হরে কৃষ্ণ ইতি– অমুক দাস।” চিঠিটিতে অবশ্যই যে ভক্তকে পাঠানো হলো তার নাম উল্লেখ করতে হবে।

এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন একটি দলগত সংহতির বিষয়। কোন ভক্ত যদি কারো সঙ্গে পরিচতি হবার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে তাকে কৃষ্ণভাবনামৃতে উৎসাহিত করতে পারে তো সেটি খুবই ভালো কথা। তা না হলে অন্য কোন ভক্ত সেই পরিচিত মানুষটির সঙ্গে এইভাবে যোগাযোগ রাখবে, তার সঙ্গে আলোচনা করবে। ধৈর্য সহকারে তার প্রশ্নসমূহের উত্তর দেবে, তাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাবে ইত্যাদি।

আমাদের অনেক প্রাক্তন ব্রহ্মচারীরা রয়েছে, যারা গৃহস্থ ধর্ম গ্রহণ করেছে এবং এখন তারা পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছে, কিন্তু তবুও তারা গ্রন্থ বিতরণ করছে। বিবাহ হওয়া এবং মন্দিরের বাইরে বাস করার অর্থ এই নয় যে তারা কেউ গ্রন্থ বিতরণ করতে পারবে না। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পবিত্র হরিনাম সংকীর্তন আন্দোলনে সকলেই, সে মন্দিরের পুরোহিতই হোক আর অন্য কোন সেবকই হোক সকলেই একই সংস্কৃতির অঙ্গ এবং গ্রন্থ বিতরণ হচ্ছে আমাদের সেই সংস্কৃতির একটি অংশ।

একবার আমি সাইবেরিয়ায় বারনৌল উৎসবে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে উপস্থিত সকল ভক্তদের মধ্যে প্রবচন দান কালে আমি জিজ্ঞাসা করলাম ‘আপনারা কতজন মন্দিরে বাস করেন?’ কিন্তু কেউই দেখলাম হাত ওঠালো না। আমি ভাবলাম আমার প্রবচন যিনি সাইরেরিয়ার ভাষায় অনুবাদ করছিলেন তিনি হয়তো আমার কথা বুঝতে পারেন নি। তাই আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম ‘আপনারা কতজন মন্দিরে বাস করেন?’ কিন্তু এবারেও কেউ হাত তুললো না। সব চুপ। এবার আমি যখন তিনবারে বার জিজ্ঞাসা করলাম ‘আপনারা কতজন মন্দিরে বাস করেন?’ তখন তাদের একজন উত্তরে জানালো, “মহারাজ, আমাদের সাইবেরিয়ায় একটিই মাত্র ছোট মন্দির আছে আর সেখানে মাত্র পাঁচজন ব্রহ্মচারী থাকতে পারে। তাই এখানে আমরা যারা উপস্থিত রয়েছি, ব্রহ্মচারী, মাতাজী, গৃহস্থ প্রত্যেকেই গৃহে থাকি এবং সকলেই গ্রন্থ বিতরণ করি।”

এই হলো ইসকন। সমবেত ভক্ত-মন্ডলীর প্রচার। ভক্তগণ যেমন গ্রন্থ বিতরণ করবেন, তেমনই মানুষকে ভক্তে পরিণত করবেন। মানুষকে ভক্তে পরিণত করার প্রথম পদক্ষেপই হলো গ্রন্থ বিতরণ। যেমন শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর করতেন। তিনি রাত্রে গ্রন্থ রচনা করতেন এবং দিনের বেলা গ্রন্থ বিতরণ করতেন। তিনি সারা পৃথিবী জুড়ে গ্রন্থ প্রেরণ করতেন।

মনে রাখতে হবে গ্রন্থ বিতরণের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সেই যোগাযোগকে লালন করে মানুষকে ভক্তে পরিণত করতে হবে যাতে সকলেই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনকে গ্রহণ করে ভগবদ্ধামে ফিরে যেতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন