বর্তমান সঙ্কট মোচনে শ্রীগৌরাঙ্গই ভরসা

 পরম পুরুষোত্তম ভগবানের কথা সদাসর্বদা শ্রবণ-কীর্তন করতে থাকলে সাধু-সজ্জন মানুষের সকল জাগতিক দুঃখ-দুর্দশার লাঘব হয়, কারণ ভগবানের চিন্তার মধ্যে থাকলে তাঁর দিব্য লীলার অমৃত আস্বাদন। কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের মাধ্যমে শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ সেই আস্বাদনের প্রতি সাধু-সজ্জন মানুষদের আগ্রহী করে তুলতে চেয়েছেন যাঁরা বাস্তবিকই সাধু-সজ্জন এবং প্রকৃত অর্থে জড়জাগতিক দুঃখকষ্ট থেকে অব্যাহতি পেতে চান, তাঁরা ভগবানের লীলা-মাহাত্ম্য ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে কখনই চিন্তা করেন না, বা কথা বলতে চান না।



ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর ভক্তবৃন্দ সম্পর্কে সদা সর্বদা আগ্রহ-আকুলতা থাকলে জড়জাগতিক দুঃখ-দুর্দশার পীড়ন আর তেমনভাবে দেহ-মনের উপরে দৌরাত্ম্য করতে সাহস পায় না। কারণ সেগুলি হল মায়ার প্রবঞ্চনা মাত্র, তাই যখনই কোনও মানুষ কৃষ্ণকথা আর কৃষ্ণচিন্তার আশ্রয় নেয়, তখনই মায়াময় দুঃখ-দুর্দশার অনুুভূতি কোনো এক দিব্যভাবের স্পর্শে দুর্বল হয়ে পড়ে।

এই হল কলিযুগে জীবনের সকল দুঃখ-কষ্ট নির্মূল করবার রহস্য। আধুনিক সমাজে নানা ধরনের ওষুধপত্র আবিষ্কার করা হচ্ছে, কিন্তু প্রকৃতিও নিত্য নতুন রোগব্যাধির ক্লেশ নিয়ে মায়াময় প্রবঞ্চনা সৃষ্টি করছে। দুঃখ কষ্টের সীমা নেই।

কিন্তু এই সমস্ত কিছুরই ঊর্ধ্বে চলে যাওয়ার অতি সহজ পন্থা রয়েছে, সেই পন্থা মোটেই কঠিন নয়, তা হল– কেলমাত্র পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিব্যলীলা এবং অপ্রাকৃত কার্যকলাপের চিন্তায় মনকে সদাসর্বদা ভরিয়ে রাখা, শ্রীকৃষ্ণের শুদ্ধ ভক্তদের কার্যকলাপ আর চিন্তাধারায় মগ্ন হয়ে থাকা।

অন্তত প্রতিদিন দু’এক ঘন্টা করে কৃষ্ণভাবনাময় গ্রন্থ চর্চা করা মোটেই দুঃসাধ্য ব্যাপার নয়, অথচ তা করতেই অনেকে সময় পায় না বলে বৃথা আক্ষেপ করে থাকে। কিন্তু আজেবাজে খবরের কাগজ আর ম্যাগাজিনগুলো দূরে ফেলে রেখে সেই সময়টা কৃষ্ণকথা শ্রবণ বা পাঠ করলে আপনা হতেই কৃষ্ণকথায় রুচি জাগতে থাকবে। আমরা যতই কৃষ্ণকথা শুনব, ততই ভাল লাগবে। রুচি তৈরী করে নিতে হবে, কারণ এটা তো ভাল রুচি– এমন একটা সাত্ত্বিক রুচি, যার চর্চা থেকে ভগবদ্ভক্তি জাগে, যে-ভক্তিভাব সকল সঙ্কট মোচনে সহায়তা করে। তাই শ্রীমদ্ভাগবতে (১/২/১৮) পরামর্শ দেওয়া হয়েছে– নিত্যং ভাগবতসেবয়া। প্রতিদিন শ্রীমদ্ভাগবতের অমৃত আস্বাদন করতে হবে শ্রবণ কীর্তনের মাধ্যমে। শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন, শ্রীমদ্ভগবদগীতা হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী সম্ভার, আর শ্রীমদ্ভাগবত হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধীয় তত্ত্ব ও লীলাবিলাস কাহিনীসম্ভার।

অতএব গীতা-ভাগবত থেকে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা শ্রবণ করলে, কৃষ্ণভাবনাময় গ্রন্থাবলী থেকে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মাহাত্ম অনুধাবন করলে অমরা বাস্তবিকই সমস্ত রকমের দুঃখ-কষ্টের গন্ডি অনায়াসে অতিক্রম করে যেতে পারি।

কারণ, কৃষ্ণভাবনা অনুশীলনের ফলে আমাদের মন এই জড় জগতের সমস্ত দুঃখ-দুর্দশার জটিলতা থেকে অন্য এক জগতে উত্তীর্ণ হয়ে যায় বলেই সব দুঃখ ভুলে যেতে পারি–মনপ্রাণ তখন এক নিত্য আনন্দে ভরে ওঠে এবং সেই আনন্দের শক্তি এমনই যে, সমস্ত দুঃখ-কষ্ট তার প্রভাবেই তুচ্ছ হয়ে যায়। সেই আনন্দ চিন্ময় জগৎ থেকে আমাদের সত্তার মধ্যে নেমে আসে।

সুতরাং আমাদের শুধু মনস্থির করে নিতে হবে–চিন্ময় আনন্দ লাভের পথে মনকে এগিয়ে দেব কি না। একবার মন ঠিক করে সেই পথে এগুতে থাকলেই শক্তি জাগতে থাকবে। কিন্তু পথিমধ্যে অধীর হলে চলবে না। অস্থিরতা জাগলে, আরও বেশি করে শ্রীকৃষ্ণ বিষয়ক কাহিনী শ্রবণ কীর্তনে মন দিতে হবে, আরও বেশি করে ভক্তিসেবা অনুশীলন করতে হবে। পারমার্থিক জীবনচর্যার সেটাই হল সংজ্ঞা–

ধর্মঃ স্বনুষ্ঠিতঃ পুংসাং বিষ্বক্‌সেনকথাসু যঃ।

নোৎপাদয়েদ্‌যদি রতিং শ্রম এব হি কেবলম্ ॥ (ভাঃ ১/২/৮)

যখনই আমরা আগ্রহ সহকারে ভক্তি বিষয়ক কথা শুনি, তখনই আমাদের পারমার্থিক জীবনচর্যা যথাযথভাবে এগিয়ে চলে। যদি আগ্রহ না জাগে, যদি আকুলতা না জাগে, তা হলে বুঝতে হবে আমরা এখনও ভক্তিমার্গের কনিষ্ঠ পর্যায়ে রয়ে গেছি।

অতএব শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু যে কৃষ্ণভাবনার ধারা বয়ে এনেছেন, শ্রীল প্রভুপাদ এবং অগ্রণী ভক্তগণ যে কৃষ্ণভক্তির প্রসার করতে চেয়েছেন, তার তাৎপর্য এইভাবে উপলব্ধি করতে হবে। গৌরপূর্ণিমা উৎসবের সময়ে ভক্তরা পরিক্রমায় বেরিয়ে কত কষ্ট পান। কিন্তু যখন আমারা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মহিমা শ্রবণ করি, সেই মুহূর্তে আমরা সমস্ত কষ্টকর পরিবেশটা ভুলে যাই। পরিক্রমা থেকে ফিরে এসে আমাদের মুখে হাসি ফুটে। কারণ আমরা অপ্রাকৃত জগতের আনন্দ আস্বাদন করে ফিরে আসি।

নবদ্বীপে শ্রীঅদ্বৈত আচার্য যখন দেখেছিলেন মানুষ ইন্দ্রিয় সুখভোগে মত্ত হয়ে পারমার্থিক আনন্দরসের আস্বাদন থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে, অথচ তারা সবই জড়জাগতিক দুঃখ-দুর্দশয় নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে, তখন তিনি স্বয়ং মহাবিষ্ণুর অংশপ্রকাশ হলেও চিন্তা করেছিলেন, ঐসব বিভ্রান্ত মানুষকে পান্ডিত্যের সঙ্কট থেকে উদ্ধার করার জন্য শুদ্ধ ভগবদ্ভক্তির আস্বাদন দিতে পারেন একমাত্র স্বয়ং ভগবান। তাই তিনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবের প্রার্থনা জানিয়ে ‘গৌরাঙ্গ’ বলে কেঁদেছিলেন, তপস্যা করেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, বিভ্রান্ত মানুষের সঙ্কট মোচনে শ্রীগৌরাঙ্গই একমাত্র ভরসা।

বাস্তবিকই, সঙ্কটকালে ক্লেশমুক্তির উদ্দেশ্যে ভগবদ্ভক্তি অর্জন করতে হলে, শুদ্ধ কৃষ্ণপ্রেম লাভ করতে হলে, স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর ভক্তমন্ডলীর অহৈতুকী কৃপা অবশ্যই অর্জন করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং শুদ্ধ ভক্তি প্রদান করতে বিশেষ আগ্রহী নন। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ধারাধামে মহাবদান্য শ্রীগৌরাঙ্গ অবতাররূপে অবতীর্ণ হয়ে সেই শুদ্ধ ভক্তি অকাতরে বিতরণ করে গেছেন–

নমো মহাবদান্যায় কৃষ্ণপ্রেম প্রদায়তে।

কৃষ্ণায় কৃষ্ণচৈতন্য নাম্নে গৌরত্বিষে নমঃ ॥

তাই শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর ভগবদ্ভক্তি বিষয়ক উপদেশাবলী অতি সহজেই আমরা মেনে চলতে পারি এবং সকল যুগেরই জড়জাগতিক সঙ্কট মোচনের কাজে লাগাতে পারি। যদি আমরা শ্রীগৌরাঙ্গদেবের পদাঙ্ক অনুসরণ করার উদ্দেশ্যে আমাদের জীবন-ধন সব উৎসর্গ করে দিতে পারি, তা হলে সর্ব সঙ্কট মোচনের মহৌষধ যে ভগবদ্ভক্তি, তার ভাবোল্লাসময় সুলক্ষণগুলি সবই একে একে আমাদের মধ্যে জেগে উঠতে পারে।

বাস্তবিকই, কৃষ্ণপ্রেম অর্জন করা জন্মজন্মান্তরের সাধনা। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু অচিরেই তা আমাদের নাগালে এনে দেন। সারা জগতের সঙ্কট মোচনের জন্য, সমস্ত মানুষকে ভগবদ্ভক্তির পথে অতি সহজে আকৃষ্ট করার জন্য, তিনি যে সংকীর্তন আন্দোলনের পরিকল্পনা করেছিলেন, তা সহজলভ্য, অথচ আশু ফলপ্রদ।

ইতিহাসে দেখি, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ১৪৮৬ সালে আবির্ভূত হন আর ১৪৯২ সালে কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করলেন– এটা কোনও আকস্মিক ব্যাপার বলে আমি মনে করি না। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রকটকালেই আমেরিকা আবিষ্কার হল, আর সেই আমেরিকাতেই শ্রীগৌরাঙ্গের নামকীর্তন আন্দোলন প্রসারে ১৯৬৫ সালে গিয়েছিলেন শ্রীল প্রভুপাদ এই গৌরভূমি ভারতবর্ষ থেকে। শ্রীল প্রভুপাদের জয় হোক! তিনি আমেরিকা থেকে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিনিধি হয়ে সারা পৃথিবীতে গৌরাঙ্গবাণী প্রচারে বেরিয়ে পড়েছিলেন– গিয়েছিলেন ইউরোপে, অস্ট্রেলিয়াতে, হংকং- এ, আফ্রিকায়, রাশিয়ায়। এ সবই শ্রীগৌরাঙ্গের দিব্য পরিকল্পনা মতোই হয়েছে, তা মানতেই হবে।

আমরা যদি শুধুই সুখ-শান্তি অর্জনের দিকে ঝুঁকে পড়ি, কিছুটা জড়জাগতিক স্বাচ্ছদ্যকেই আঁকড়ে থাকতে চাই, তা হলে আমাদের শুদ্ধ অমৃতের আস্বাদন থেকে, কৃষ্ণভাবনামৃত থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকতে হবে। আর তার ফলে আমাদের মন হবে চঞ্চল– ঐসব অনিত্য সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বাসনা থেকেই জাগবে আমদের চাঞ্চল্য।

কিন্তু শ্রীগৌরাঙ্গবাণী অণুসরণ করে আমরা যদি শ্রীকৃষ্ণভক্তি অর্জনের উদ্দেশ্যে, ভগবদ্-প্রেমের সন্ধানে আত্মনিয়োগ করি, তা হলে আপনা থেকেই আমাদের অপ্রাকৃত সুখ-শান্তি আসবে। যে কোন অবস্থাতেই আমরা থাকি না কেন, কৃষ্ণভাবনা চর্চা করার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের মাঝে প্রকৃত সুখের উন্মেষ ঘটতে থাকবে, সে-বিষয়ে কোনই সন্দেহ নেই।

আসলে, ভগবদ্ভক্তি চর্চার মধ্যে যে প্রকৃত সুখের আস্বাদন রয়েছে, তারই সন্ধান করছে প্রত্যেকে, কিন্তু যথাযথ আগ্রহের স্বল্পতায় এবং শুদ্ধ ভক্তের কৃপার অভাবে, অনেকে তা অর্জন করতে পারছে না।

অথচ শ্রীগৌরাঙ্গদেব প্রবর্তিত হরেকৃষ্ণ সংকীর্তন যজ্ঞের মাধ্যমে কলিযুগের সব রকম সঙ্কট আর বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়া যায়, একথা শ্রীল প্রভুপাদ বিশ্বব্যাপী অগণিত মানুষকে আজ বোঝতে পারলেও, এখনও বহু লোক দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে রয়েছে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন, সুখী হতে হলে শ্রীকৃষ্ণের প্রীতিবিধানের উদ্দেশ্যে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করতেই হবে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রীত হলে তাঁর কাছ থেকেই দিব্য সুখের ধারা সবার ওপরে নেমে আসবে।

শ্রীল প্রভুপাদ বলেছিলেন, ভগবদ্ভক্তি চর্চায় আগ্রহী হতে হলে চিন্ময় ভাবনার একটা ক্ষুধা থাকা চাই। কেবল মনে মনে ভাবলেই হয় না, লোক দেখানো অনুকরণ করলেই চলে না। সত্যিকারের আকুলতা, যথার্থ পিপাসা, কৃষ্ণলীলার অমৃত আস্বাদনে তীব্র ক্ষুধা জাগাতে হবে। হরেকৃষ্ণ সংকীর্তন আন্দোলন সারা পৃথিবীতে নানাভাবে সার্থকতার মাধ্যমে সেই কাজ করে চলেছে। কারণ এ ছাড়া মানুষের সমূহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার অন্য কোনও পন্থা নেই। আজ সে-কথা ধীরে ধীরে পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রনায়কেরাই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছেন।

শ্রীগৌরাঙ্গের সংকীর্তন আন্দোলন যুগসঙ্কট নিরসরে প্রামাণ্য এক পন্থা আর শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ সেই পন্থা অবলম্বন করেই বিদ্যুৎ গতিতে লক্ষ লক্ষ কপি কৃষ্ণগ্রন্থাবলীর প্রচার মাধ্যমে অগণিত মানুষের অন্তরে সত্যি সত্যিই কৃষ্ণপ্রেম-পিপাসা জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন। আমরাও পরম নিষ্ঠাভরে সেই পন্থা অনুসরণ করে চলেছি।

শ্রীগৌরাঙ্গ-চরণে প্রণত হয়ে তাঁর কাছে  দুঃখজর্জরিত আমাদের সকলকেই প্রার্থনা জানাতে হবে, “হে মহাপ্রভু, আপনার চরণে আমরা আত্মসমর্পণ করলাম, আপনার চরণধূলিকণারূপে আমাদের ঠাঁই দিন- আপনার সংকীর্তন আন্দোলনে আমাদের  যুক্ত করুন– আমাদের আর কোনও বাসনা নেই!”

নং ধনং ন জনং ন সুন্দরীং

কবিতাং বা জগদীশ কাময়ে। (শ্রীশিক্ষাষ্টক)

তাঁরই ভাষায় বলতে হবে–“আপনার চরণসেবা ছাড়া আমাদের আর কোনই বাসনা নেই, ধনজন স্ত্রী পুত্র ঐশ্বর্য কিছুই চাই না– এই হোক শ্রীগৌরপূর্ণিমার শুভ আবির্ভাব তিথিতে আপনার আশীর্বাদ– কারণ আপনার চরণে আমরা পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করেছি।”

এর মধ্যে কোনই বোঝাপড়া কিংবা আপস-রফা চলবে না। শুদ্ধ জীবনচর্যার মান  উন্নত রাখতেই হবে, শ্রীল প্রভুপাদ সেই কথা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন। প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে শ্রীগৌরাঙ্গদেব প্রদর্শিত, তাঁর ‘শিক্ষাষ্টকে’ বাণীবদ্ধ নির্দেশ মেনে সহজ সরল জীবনচর্যায় অনুপ্রাণিত হতেই হবে– সঙ্কট মোচনের সেটাই একমাত্র ভরসা।

এই গৌরাঙ্গ-বাণী যে স্বয়ং ভগবানেরই বাণী, তার প্রমাণ অনেক আছে, তবে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী প্রমাণ গাথা রয়েছে শ্রীদ্ভাগবতেই–

কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাহকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদম্।

যজ্ঞৈঃ সঙ্কীর্তনপ্রায়ৈর্যজন্তি হি সুমেধসঃ ॥  (ভাঃ ১১/৫/৩২)

শ্রীল জীব গোস্বামী এই শ্লোকটির বিশ্লেষণ করে বলেছেন, শ্রীকৃষ্ণ গৌরকান্তি ধারণ করে অবতীর্ণ হবেন। সেই গৌরাঙ্গ শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, যাঁকে বুদ্ধিমান মানুষেরা এই যুগে আরাধনা করে থাকেন। সেই আরাধনায় শ্রীকৃষ্ণের নাম-সংকীর্তন প্রাধান্য লাভ করবে। কারণ কলিযুগে ব্যাপকভাবে শ্রীগৌরাঙ্গ প্রবর্তিত হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রই মানুষের একমাত্র ভরসা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন