গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক

 



পারমার্থিক জীবনে সিদ্ধিলাভের যথার্থ উপায় হচ্ছে শ্রীল গুরুদেবের সন্তোষবিধান এবং তার ফলে তাঁর আন্তরিক আশীর্বাদ লাভ করা। শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর তাঁর বিখ্যাত গুর্ব্বষ্টকমে বলেছেন–

যস্য প্রসাদাদ্ ভগবৎপ্রসাদো

যস্যাপ্রসাদান্ন গতি কুতোহপি।

ধ্যায়ন্স্তবংস্তস্য যশস্ত্রিসন্ধ্যং

বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥

অর্থাৎ, ‘যিনি প্রীত হলে পরমেশ্বর ভগবান সন্তুষ্ট হন এবং যিনি অসন্তুষ্ট হলে জীবনে আর কোন গতি থাকে না, আমার সেই পরমারাধ্য গুরুদেবের শ্রীপাদপদ্মে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।’ তাই শিষ্যের কর্তব্য হচ্ছে অত্যন্ত বিনীত ভাবে সদ্্গুরুর সেবা করা। শ্রীল সূত গোস্বামী আদর্শ শিষ্যের এই সমস্ত গুণাবলী প্রদর্শণ করেছিলেন এবং তাই শ্রীল ব্যাসদেব আদি তাঁর সমস্ত তত্ত্বদ্রষ্টা গুরুদেবের নিকট থেকে বিশেষ কৃপাধন্য হয়েছিলেন। নৈমিষারণ্যের ঋষিরা নিশ্চিতভাবে জানতেন যে, শ্রীল সূত গোস্বামী হচ্ছেন এক যথার্থ সদগুরু। তাই তাঁর শ্রীমুখের বাণী শ্রবণ করার জন্য তাঁরা উদগ্রীব হয়েছিলেন।

এই শ্লোকটি কতকগুলি গূঢ় রহস্য উদ্ঘাটন করছে। শ্রীল প্রভুপাদ এখানে বলেছেন যে, পারমার্থিক জীবনে সার্থকতার রহস্য হল পারমার্থিক দীক্ষাগুরুর সন্তোষবিধান এবং তাঁর আন্তরিক আশীর্বাদ অর্জন।

এক সময়ে যখন শ্রীমায়াপুর ধামে বিশাল এবং অতি মনোরম মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রীল প্রভুপাদ এক পারমার্থিক মহনগরী গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে শ্রীমায়াপুর প্রকল্পটি প্রবর্তনের কাজ করছিলেন, তখন শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের তিরোভাব তিথিতে শ্রীল প্রভুপাদ পারমার্থিক দীক্ষাগুরুর তিরোভাব তিথির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। তখন তিনি উল্লেখ করেছিলেন কিভাবে সে-সময়ে এক কালে জগন্নাথ দাস বাবাজী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সঠিক জন্মস্থান নির্ধারণে সাহায্য করেন এবং কিভাবে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করতেন আর সেখানে প্রথম মন্দিরটি গড়ে তুলেছিলেন।

এইভাবে শ্রীল প্রভুপাদ গুরুশিষ্য পরম্পরার ধারা নির্ণয়ের প্রয়াস লাভ করে বলতেন, কিভাবে সমস্ত আচার্যবর্গই শ্রীধাম মায়াপুর উন্নয়নের জন্য কিছু না কিছু একটা চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল। তাঁর দীক্ষা গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরও শ্রীচেতন্য মহাপ্রভুর পুণ্য জন্মস্থানটিকে গড়ে তোলার জন্য এবং তার আরও উন্নতি সাধনের জন্য কাজ করেছিলেন।

তারপর শ্রীল প্রভুপাদ বলেন, “আমিও তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কিছু করবার চেষ্টা করছি।” আর তিনি বলেন যে, সার্থকতার রহস্যই হল পূর্বতন আচার্যবর্গের প্রীতিসাধন। তারপরে তিনি বলেছিলেন যে, পূর্বতন আচার্যবর্গ যে পুণ্য শ্রীধাম মায়াপুরর উন্নতি সাধনের জন্য বিশেষ অভিলাষ পোষণ করে গিয়েছেন, তার উন্নতিকল্পে তার সমস্ত অনুগামীরা তাঁর সাথে সহায়তা করছেন, তাঁদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞ। তার পরে কেমন করে যেন শ্রীল প্রভুপাদের কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে আসে এবং তিনি আর কোনও কথা বলতে পারেননি। তাঁর চোখ বেয়ে অশ্রুধারা নেমে আসে আর খানিক পরে তিনি শুধুই প্রত্যেককে হরেকৃষ্ণ কীর্তন করতে বলেন। সেখানেই প্রবচন সভা সাঙ্গ হয়ে যায়।

কতবার শ্রীল প্রভুপাদ ব্যক্ত করেছেন কিভাবে তিনি নিয়ত পূর্বতন আচার্যবর্গের সন্তোষ বিধানের চেষ্টায়  ভাবিত হয়ে থাকতেন। আচার্য যে নিজেকে নতুন এক কর্তা মনে করেন, আর সমস্ত পূবর্তন আচাযবর্গের কথা ভুলে যান, তা নয়। মায়াবাদী প্রথা তা হতেও পারে। আমরা শুনেছি মায়াবাদীরা যখন সন্ন্যাসী বা গুরু হয়, তারা ঐরকম মনে করে। ওরা ভাবে ওরা ভগবান হয়ে গেছে, আর যাই ইচ্ছা, তাই করতে পারে। গুরু ব্রহ্মা, গুরু বিষ্ণু, গুরু দেবো মহেশ্বরঃ– এই ধরনের মন্ত্র ওদের পূর্বতন গুরু দরজার গোড়ায় পাপোষের মতো, তুমি যেন তাঁর মাথার ওপর পা দিয়ে নির্বাণ অর্থাৎ ব্রহ্মজ্যোতির পথে ঢুকে পড়তে পারো।

কিন্তু আমাদের বৈষ্ণব ঐতিহ্যে, আমরা সবিশেষবাদী এবং সর্বদাই আমরা গুরুপরম্পরা-ক্রমে পূবর্ত আচার্যবর্গের স্মরণ করে থাকি আর তাঁদেরই অভিলাষ বাসনাদি আমাদের ভাবনা-চিন্তার ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠিত রাখার চেষ্টা করে থাকি।

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বিশেষ দৃঢ়ভাবে এর দৃষ্টান্ত প্রদর্শণ করেছিলেন। শ্রীমদ্ভাগবতের প্রথম যিনি ভাষ্যকর শ্রীধর গোস্বামী, তিনি এ সম্পর্কে একটা সুন্দর ভাষ্য প্রদন করেন, যদিও সেটা সম্পূর্ণ বিশদ ব্যাখ্যাকারী ভাষ্য না মনে হতেও পারে (বাস্তবিকই পরবর্তীকালে অন্যান্য ভাষ্যকারেরাও শ্রীমদ্ভাগবতের আরও বিশদ তাৎপর্য ব্যক্ত করেন।) যদি কেউ আদি ভাষ্যকারের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন না করতেন, তা হলে শ্রীচৈতন্য মহাপভু তাতে সায় দিতেন না। যখন এক ভাষ্যকার শ্রীধর গোস্বামীর ভাষ্যের মর্যাদা কিছুটা হানি করে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাতে বলেন, “তোমার স্বামীজীর প্রতি তুমি অনুগত নও।” পরোক্ষভাবে তিনি ‘স্বামী’ কথাটির বিশেষ শব্দব্যঞ্জনা বোঝাতেই চেয়েছিলেন– যে কথাটির অর্থ সন্ন্যাসী এবং পতি বা প্রভু দুই-ই বোঝায়। কোনও মহিলাকে যদি বলা হয় যে, সে তার স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত নয়, তা হলে তার পরোক্ষভাবে অর্থ হয় এই যে, সেই মহিলাটি নষ্টচরিত্রা, কিংবা হয়তো বারনারী হতেও পারে।

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই বিষয়ে ছিলেন বিশেষ কঠোর। তিনি সদাসর্বদাই তাঁর পূবর্তন আচার্যবর্গের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন। উৎসর্গ করতে পারেন এমন যে কোনও অনুদান তিনি গ্রহণ করতেন। তা তিনি রেখে দিতেন, পারলে তাকে বাড়িয়ে তুলতেন আর তার বিকাশ উন্নতি সাধন করতেন। সেটাতো তো ঠিক। তাদের নামের খাতিরে নয়, তাদের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং যথাযোগ্য ভক্তি সহকারেই তা করতে হয় এ কাজে কেবল আমাদেরই আধিপত্য রয়েছে। তাও নয়, বরং বলতে হয়,  আমরা তাঁদের সেবারই চেষ্টা করছি, এবং তাঁর উদ্দেশ্যে-লক্ষ্য পরিপূরণের প্রয়াস করছি। তাঁরা যে উদ্যোগের পরিকল্পনা করেছিলেন, যদি আমরা তার আরও প্রসার ঘটাতে পারি, তাতেই তাঁরা হবেন বেশি সন্তুষ্ট। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের চেয়ে আরও বিশাল মন্দির শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর গড়ে তুলেছিলেন বলে সেটা শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের প্রতি অপরাধ করা হয়েছে তা নয়। বরং আরও বিশাল মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে, তাতে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর আরও কতই না সন্তুষ্ট হবেন। ঠিক তেমনই, ইসকনে, পুণ্য শ্রীধাম মায়াপুরে যদি আমরা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আরও সুন্দর আর মহিমামন্ডিত মন্দির গড়ে তুলতে পারি, নিশ্চয়ই তাতে পূর্বতন আচার্যবর্গের আরও বেশি প্রীতি সাধন হবে। একবার শ্রীমায়াপুরের কিছু সমসাময়িক প্রচারকবর্গ শ্রীল প্রভুপাদকে ইঙ্গিত জানিয়েছিলেন যে, যদি তিনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মাস্থানের মন্দিরটির চেয়ে আরও বিশাল একটা মন্দির করতে চান, তা হলে তাতে পূর্বতন আচার্যবর্গ অসন্তুষ্ট হবেন। এ সমস্তই কূটনৈতিক কথা।

একবার শ্রীল প্রভুপাদ উল্লেখ করেন যে, কেউ যদি মায়াপুরে ত্রিশতলা একটা আকাশছোয়া অট্টালিকা গড়ে তুলতে পারে তো তাদের চিন্ময় প্রত্যাবর্তন ঘটবে। কেউ একবার শ্রীল প্রভুপাদের কাছে জানতে চায়, “মায়াপুরে বিশাল মন্দিরটি উদ্বোধন করবার জন্য যদি আমরা আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট আর ইংল্যান্ডের রাজাকে আনতে পারি, তবে কী সেটা পূর্বতন আচার্যবর্গের প্রীতি সাধন করবে বা ঐ ধরনের কিছু একটা করলে কেমন হয়?” তখন শ্রীল প্রভুপাদ বলেন, “যদি তোমরা তা করতে পার তাহলে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর চিন্ময় জগৎ থেকে এসে তোমাদের হাত ধরে সোজা বৈকুন্ঠধামে নিয়ে চলে যাবেন।” সেইভাবেই শ্রীল প্রভুপাদ ব্যক্ত করতেন তার হৃদয়ের মাঝে পূর্বতন আচার্যবর্গের অতীব প্রীতিপ্রদ যা কিছু করণীয়, তা তিনি নিয়ত কিভাবে জাগরূক রাখতেন।

এখানে এই শ্লোকটিতে, মহানমুনিবর্গ শ্রীল সূত গোস্বামীর গুণগান করছেন, “আপনার গুরুদেববর্গের প্রতি আপনি নম্রবিনয়ী শ্রদ্ধাশীল এবং তাই তো তারা আপনার ওপরে তাঁদের সমস্ত আশীর্বাদ প্রদান করেছেন।” যারা দুর্বিনীত তার পূর্বতন আচার্যবর্গ যা বলে গেছেন, তা মানতে চায় না। তাদের নিজস্ব ধ্যান ধারণাগুলি কেউ তারা অকাট্য বা উত্তমোত্তম একটা কিছু বলে চালাতে চায়। এইভাবে তারা বাস্তবিকই গুরুশিষ্য পরম্পরাক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করে থাকে। প্রভুপাদ যে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন, তা হল এই যে, শ্রীল সূত গোস্বামী যে যথার্থ সদ্গুরু ছিলেন, সে সম্পর্কে নৈমিষারণ্যের ঋষিকুল দৃঢ়প্রত্যয় ছিলেন আর তাই তাঁর কাছ থেকে তাঁরা তত্ত্বকথা শ্রবণে উৎসুক হন।

যথার্থ সদ্গুরু হওয়ার যোগ্যতা কি? যদি কেউ তার গুরুর প্রতি শ্রদ্ধাবান না হয় তো কি করে সে গুরুর প্রতিভূ হবে? কেউ যদি গুরুদেরেব কাছ থেকে সব কিছু বিনয় নম্রতা সহকারে না শেখে তো কিভাবে ঐসব ধ্যানধারণার কথা সে যথাযথভাবে উপস্থাপন করবে, কেমন করে গুরুপরম্পরার ধারা অক্ষুন্ন থাকবে? শ্রবণ মাধ্যমে, গুরুকৃপার মাধ্যমে মানুষ কৃষ্ণভাবনাময় দার্শনিক তত্ত্ব বুঝতে পারে আর তা থেকেই পালাক্রমে সে অন্যের কাছে তা পৌছে দিতে পারে। কিন্তু মানুষ যদি শ্রদ্ধাসহকারে না শোনে আর নিজের ধ্যানধারনা আরোপিত করে, তা হলে তো মূল ধ্যানধারণা বংশানুক্রমে পৌছে দেওয়া যাবে না। সেটা বিকৃত হয়ে যাবে আর অন্যরকমের একটা কিছু হয়ে পড়বে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ছিলেন এরই বিরোধী, আর তাই তিনি মহাপন্ডিতকে বলেন, “তুমি খুব বিদ্বান হতে পার, কিন্তু যেহেতু তুমি আদি ভাষ্যকারকে অবহেলা করেছ, তাই তুমি বিচ্যুত।” তাঁরা যা করেছেন, তা আমাদের রক্ষা করতে হবে, আর তা পরে তার বেশি আমরা যা কিছু ব্যাখ্যা করলেও করতে পারি। কিন্তু তাঁদের মর্যাদা হানির মাধ্যমে তা করা যাবে না। যদি পূর্বতন আচার্যবর্গের চেয়ে  বেশি বুদ্ধিমান হতে চেষ্টা করি, এবং তাঁদের ধ্যানধারণার পরিপন্থী আমাদের ধ্যানধারণাগুলি উপস্থাপন করি, তো আমরা যথাযথ হলাম কি করে?

শ্রীল সূত গোস্বামীর পিতা রোমহর্ষণের হয়েছিল সেই সমস্যা। তিনিও ছিলেন, অতীব বিদগ্ধজন, কিন্তু কোনক্রমে তিনি লক্ষ্যে উপনীত হতে পারছিলেন না, সারমর্ম হৃদয়ঙ্গম হচ্ছিল না। খানিকটা বিনয়-নম্রতার অভাব ছিল। যখন আদি গুরু শ্রীবলরাম প্রভু এলেন, তাঁর দাঁড়িয়ে উঠে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত ছিল। ব্যাপারটা সামন্য নয়, বিশেষত যখন পরমেশ্বর প্রভু স্বয়ং আগমন করেন। ব্যাসাসন মানে আপনি শ্রীব্যাসদেবের আসনে উপবেশন করে রয়েছেন, আপনি শ্রীব্যাসদেবের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আর স্বয়ং ব্যাসদেবর যখন আসেন, নিশ্চয়ই আপনি উঠে দাঁড়াবেন আর তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তিনি যদি বলেন, “এখন বসো, প্রবচন সভা হোক।”– তাই তখন করতে হয়।

তেমনি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবলরাম স্বয়ং এসেছিলেন, কিন্তু তিনি ভাবছিলেন, “আমি আসনে বসে আছি। কাউকে আমার শ্রদ্ধা দেখাতে হবে না।” কোনক্রমে তাঁর অন্তদৃষ্টি কলুষিত হয়ে পড়েছিল। তা না হলে কেন শ্রীবলরাম তাঁর কাছে এগিয়ে এসে একটি ছোট্ট কুশাঘাতে তাঁর প্রাণবায়ু হরণ করে নিলেন?

নিঃসন্দেহে রোমহর্ষণ ছিলেন মহাপন্ডিত, তা না হলে সমস্ত মহর্ষিদের সামনের সারিতে বসাতেন না। কিন্তু তাঁকে কেন আসন থেকে দূর করে দেওয়া হল? কেন তাঁকে  নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল? কারণ তিনি শ্রীবলরামকে তাঁর দন্ডবৎ প্রণাম বা শ্রদ্ধা নিবেদন করেননি। শ্রীবলরামের সামনে আভূমি প্রণত হতে তাঁকে বাধ্য করা হয়েছিল।

এখানে আমরা বুঝতে পারি যে, কৃষ্ণভাবনা সম্পর্কে কিছু বলবার ক্ষমতা অর্জনের জন্য যদিও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাগ্রহণ খুবই প্রয়োজন, তবু তার চেয়েও যেটা বেশি করে দরকার, তা হল পারমার্থিক দীক্ষাগুরুর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তাঁর বাণী অনুসরণে বিশ্বস্ত হয়ে থাকা। যদি কোন মতপার্থক্য থাকে, কিংবা যদি অশ্রদ্ধাভরে কেউ বলে, “আমার গুরু আমাকে যা শিখিয়েছেন, তার থেকে ভিন্ন কিছু আমি জানি, “তা হলে সেই লোকটির মহত্ত্বের লক্ষণ সেটা নয়, বরং সে যে রোমহর্ষণের মতো অযোগ্য, তারই লক্ষণ সেটা। বিনীয় ন¤্র শিষ্য হল, যে শিষ্য পারমার্থিক দীক্ষাগুরুর নির্দেশ শ্রদ্ধাসহকারে প্রতিপালনে জীবনোৎসর্গ করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন