শ্রীপাদ পঙ্কজাঙ্ঘ্রী প্রভু, ইসকনের সর্বাধিক প্রিয় শ্রী শ্রী নৃসিংহদেবের পূজারী, আজ শ্রীধাম মায়াপুরে এই পৃথিবী ত্যাগ করেছেন।

 


সুপ্রিয় ভক্তগণ,

আমাদের বিনম্র প্রণতি গ্রহণ করুন। শ্রীল প্রভুপাদের জয়!
শ্রীপাদ পঙ্কজাঙ্ঘ্রী প্রভু, ইসকনের সর্বাধিক প্রিয় শ্রী শ্রী নৃসিংহদেবের পূজারী, আজ শ্রীধাম মায়াপুরে এই পৃথিবী ত্যাগ করেছেন।
তাঁর যমজ ভ্রাতা শ্রীপাদ জননিবাস প্রভুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইসকনে যোগদানের পর ১৯৭৩ সালে এই ভ্রাতৃদ্বয় শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর দিব্য লীলাভূমি শ্রীধাম মায়াপুরে ইসকনের প্রধান কেন্দ্রে আরাধ্য শ্রীবিগ্রহগণের সেবায় তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
শ্রীপাদ পঙ্কজাঙ্ঘ্রী প্রভু কেবল পরমেশ্বর ভগবানের সেবাই করেননি, তিনি বিশ্বব্যাপী সেসকল ভক্তেরও সেবা করেছেন- যারা প্রয়োজনে কিংবা সংকটে তাদের হৃদয়ের আর্তি শ্রী শ্রী নৃসিংহদেবের চরণে নিবেদনের জন্যে তাঁর নিকট অনুরোধ করেছেন। শ্রীধাম মায়াপুরে আসা প্রত্যেক ভক্তের হৃদয়ের মণিকোঠায় এই চিত্রপট আঁকা থাকবে - শ্রীপাদ পঙ্কজাঙ্ঘ্রী প্রভু শ্রীশ্রী নৃসিংহদেবের সিংহাসনে সামনে দাঁড়িয়ে, ভক্তদের পক্ষ থেকে প্রার্থনা ও আরাধনারত, এবং পরবর্তীতে ভগবানের মহাপ্রসাদ ভক্তদের বিতরণ করছেন।
আমাদের অনেকেই হয়তো জানিনা যে পর্দার আড়ালে শ্রীপাদ পঙ্কজাঙ্ঘ্রী প্রভু বহুবছর ধরে পূজারী বিভাগ পরিচালনা করেছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যেন শ্রীবিগ্রহগণের সেবাপূজা সুচারুরূপে চলমান থাকে এবং এর গভীরতা ও বিস্তৃতি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। কেবল শ্রীধাম মায়াপুরেই উপলভ্য শ্রীবিগ্রহগণের অপূর্ব দর্শন এবং অনন্য মহোৎসবের দ্বারা আমরা যে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছি, তার জন্যে আমরা সকলে শ্রীপাদ পঙ্কজাঙ্ঘ্রী প্রভুর নিকট চিরকৃতজ্ঞ।
শ্রীপাদ পঙ্কজাঙ্ঘ্রী প্রভু ভক্তদের সাপ্তাহিক শ্রীমদ্ভাগবত এবং শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত থেকে প্রবচন প্রদানের মাধ্যমেও ভক্তদের কৃপা করেছেন। তিনি ব্রাহ্মণ্যধর্মের শিক্ষাপ্রদানের আন্তর্জাতিক শিক্ষালয় মায়াপুর একাডেমির অনুপ্রেরণা এবং প্রতিষ্ঠাতা পর্ষদের অন্যতম, যেখানে তিনি শ্রীল প্রভুপাদের নির্দেশনা অনুসারে শ্রীবিগ্রহ অর্চনার যথার্থ মনোভাব এবং পন্থা শত শত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিয়েছেন।
একজন পূজারী, প্রশাসক, সুবক্তা এবং প্রশিক্ষকরূপে বিগত অর্ধশতবর্ষের অবিচল সেবাপ্রদানের সাথে শ্রীপাদ পঙ্কজাঙ্ঘ্রী প্রভু সমগ্র মায়াপুর সমাজ এবং বিশ্বব্যাপী ইসকন পরিমণ্ডলে একজন প্রিয় ভ্রাতা, পিতৃব্য এবং সুহৃদরূপে সমাদৃত। আজ বিশেষত তাঁর পিতৃব্যসুলভ স্নেহ-ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠা নব-প্রজন্মের মায়াপুরবাসীর জন্যে এক হৃদয়বিদারক দিন।
এরকম আত্মনিবেদন, বিনম্রতা, প্রাণচাঞ্চল্য এবং কারুণ্যের সমাবেশে কোন ব্যক্তিত্বের সন্ধান পাওয়া সত্যিই দুর্লভ। যেমনটি শ্রীল প্রভুপাদ ১৯৭৬ সালে বলেছেন- "এই দুই ভাই, পঙ্কজাঙ্ঘ্রী এবং জননিবাস- তাঁদের কোন তুলনা নাই।"
আমরা বিশ্বব্যাপী শোকার্ত বৈষ্ণব পরিবার, বিশেষত শ্রীপাদ জননিবাস প্রভু এবং মায়াপুর সমাজের সাথে তাঁদের প্রিয় গুরুভ্রাতা এবং সুহৃদ হারাবার বেদনায় একাত্মতা প্রকাশ করছি, এবং সেইসাথে শ্রী শ্রী নৃসিংহদেবের কৃপায় কৃতজ্ঞবোধ করছি, যিনি কৃপাপরবশ হয়ে তাঁর প্রিয় সেবককে শ্রীধাম মায়াপুরে ফিরিয়ে এনে এক সুমহান প্রস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন, যা শ্রীপাদ পঙ্কজাঙ্ঘ্রী প্রভুর মত নিবেদিতপ্রাণ ভক্তের জন্যে যথোপযুক্ত।
হরে কৃষ্ণ!
আপনাদের সেবায়,
ভক্তি চৈতন্য স্বামী,
ভানু স্বামী,
রেবতী রমণ দাস,
জিবিসি কার্যনির্বাহী পর্ষদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন