প্রণাম তিন প্রকার-অষ্টাঙ্গ, পঞ্চাঙ্গ ও ত্র্যঙ্গ।

 প্রণাম




প্রণাম তিন প্রকার-অষ্টাঙ্গ, পঞ্চাঙ্গ ও ত্র্যঙ্গ।
চক্ষু দ্বারা মূর্ত্তি দর্শন ও মন দ্বারা চিন্তা, এবং জানুদ্বয়, পদদ্বয়, হস্তদ্বয়, বক্ষ ও মস্তক-এই পাঁচ অঙ্গ ভূমি-লগ্ন করিয়া, বাক্য দ্বারা প্রণাম মন্ত্র পাঠ করিয়া দণ্ডবৎ প্রণামকে অষ্টাঙ্গ প্রণাম বলে। উক্তরূপে দৃষ্টি ও বাক্য দ্বারা এবং জানুদ্বয়, করদ্বয়, ও মস্তক দ্বারা ভূমিস্পর্শনপূর্বক যে প্রণাম, তাহাকে ত্র্যঙ্গ প্রণাম বলে। অষ্টাঙ্গ প্রণাম উত্তম, পঞ্চাঙ্গ প্রণাম মধ্যম, এবং ত্র্যঙ্গ প্রণাম অধম। শিব ও শক্তিকে দক্ষিণ দিকে রাখিয়া, এবং অন্যান্য দেবতাকে বাম দিকে রাখিয়া, প্রণাম করিবে। কিন্তু সন্মুখে রাখিয়া সকল দেবতাকেই প্রণাম করা যাইতে পারে। গুরুজন ও দেব-প্রতিমাকে দেখিলেই প্রণাম করিতে হয়। পিতা, মাতা, জ্যেষ্ঠভ্রাতা প্রভৃতি গুরুজনকে প্রত্যহ প্রাতঃকালে ও সায়ংকালে প্রণাম করা কর্ত্তব্য। গুরুজনদিগকে সন্মুখে রাখিয়া প্রণাম করিবে; কিন্তু তাঁহারা বেগে গমন করিতে থাকিলে, অপবিত্র থাকিলে, অন্যমনস্ক থাকিলে, তেল মাখিলে, স্নান বা আহার করিতে থাকিলে, জপ বা হোম করিতে থাকিলে এবং তাঁহাদের হস্তে পুষ্প, মৃত্তিকা, কুশ, জল। অগ্নি বা অন্ন থাকিলে, সে সময়ে প্রণাম করিবে না। এক হস্তে প্রণাম করিতে নাই। পশ্চান্তাগে ও প্রণাম করিবে না। পিতৃব্য, পিতৃষসা, মাতুল ও মাতৃষসা, বয়ঃকনিষ্ঠ হইলে প্রণাম করিবে না। কিন্তু গুরুপত্নী, ভ্রাতৃজায়া ও বিমাতা বয়ঃকনিষ্ঠা হইলেও প্রণম্য। মাতা ভিন্ন কোনও স্ত্রীলোকের পদধূলি লইবে না। পিতা ও মাতা একত্র থাকিলে অগ্রে পিতাকে প্রণাম করিয়া, পরে মাতাকে প্রণাম করিবে)গর্ভে ধারণ ও পোষণের জন্য অপেক্ষা মাতা গুরুতর হইলেও পিতা অগ্রে পূজ্য ও প্রণম্য; শাস্ত্রে আছে-শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন হইতে মুথুরায় গিয়া অগ্রে বসুদেবকে প্রণাম করিয়া পরে দেবকীকে প্রণাম করিয়াছিলেন)। ব্রাহ্মণে প্রণাম করিলে 'বিষ্ণবে নমঃ' বলিয়া প্রতিপ্রণাম করিবে। পুত্রাদি প্রণাম করিলে 'স্বস্তি' বলিবে। হীনবর্ণে প্রণাম করিলে "জয়োহস্তু" "কল্যাণ্মস্তু" "ধর্ম্মে মতিরস্তু" ইত্যাদি বলিয়া আশীর্ব্বাদ করিবে। আশীর্ব্বাদকালে, দক্ষিণ কর উত্তান-(চিৎ)-ভাবে অধঃপ্রসারিত করিয়া বৃদ্ধঙ্গুষ্ঠ দ্বারা অনামিকার মূলপর্ব্ব স্পর্শরূপ বরমুদ্রা দেখাইবে। রাত্রিতে প্রনাম, আশীর্ব্বাদ নিষিদ্ধ বলিয়া "প্রাতপ্রণাম", ও "প্রাতর্জ্জয়োহস্তু" বলিতে হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন